ইংরেজি
দক্ষতায় খুবই নিম্ন স্তরে
বাংলাদেশ
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ
আকতারুজ্জামান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
পরিদর্শনে যান গত জুলাইয়ে। বিদ্যালয়টির
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বইয়ের একটি
অধ্যায় পড়তে দেন তিনি। একজন
শিক্ষার্থীও সাবলীলভাবে তা পড়তে পারেনি।
শিক্ষার
ভিত্তি পর্বের এ ইংরেজি
দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে পরবর্তী
স্তরগুলোয়। মাধ্যমিক
কিংবা কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষাও শেষ হচ্ছে ইংরেজিতে
অদক্ষতা নিয়ে। আন্তর্জাতিক
সমীক্ষাও বলছে, ইংরেজি দক্ষতায়
বাংলাদেশের অবস্থান খুবই নিম্ন স্তরের। যদিও
ব্যবসা, শিক্ষা, গবেষণা এমনকি বিদেশ
ভ্রমণ সব ক্ষেত্রেই ভাষা
হিসেবে ইংরেজির দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।
পাঁচ দশকের বেশি সময়
ধরে ভাষা ও সংস্কৃতি
নিয়ে কাজ করছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এডুকেশন ফার্স্ট (ইএফ)। ১১৬টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগোষ্ঠীর ইংরেজি দক্ষতা বিষয়ে সূচক প্রকাশ করে আসছে। চলতি বছরের সূচকটি এ মাসেই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম ভাষা ইংরেজি নয় এমন ১০০টি দেশের ২৩ লাখ মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে ইংরেজি দক্ষতা পরিমাপ করেছে তারা। প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশগুলোকে অতি উচ্চ, উচ্চ, মধ্যম, নিম্ন ও খুবই নিম্ন দক্ষ—এ পাঁচ স্তরে ভাগ করা হয়েছে। ৪৮ দশমিক ১১ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার একাত্তরতম স্থানে, দক্ষতার শ্রেণী হিসেবে যা খুবই নিম্ন।
নিয়ে কাজ করছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এডুকেশন ফার্স্ট (ইএফ)। ১১৬টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগোষ্ঠীর ইংরেজি দক্ষতা বিষয়ে সূচক প্রকাশ করে আসছে। চলতি বছরের সূচকটি এ মাসেই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম ভাষা ইংরেজি নয় এমন ১০০টি দেশের ২৩ লাখ মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে ইংরেজি দক্ষতা পরিমাপ করেছে তারা। প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশগুলোকে অতি উচ্চ, উচ্চ, মধ্যম, নিম্ন ও খুবই নিম্ন দক্ষ—এ পাঁচ স্তরে ভাগ করা হয়েছে। ৪৮ দশমিক ১১ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার একাত্তরতম স্থানে, দক্ষতার শ্রেণী হিসেবে যা খুবই নিম্ন।
শিক্ষাবিদরা
বলছেন, প্রাথমিক স্তর থেকেই দেশের
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজিভীতি তৈরি
হচ্ছে। মানসম্মত
শিক্ষকের অভাব ও দুর্বল
পাঠক্রমের কারণে পরবর্তী ধাপগুলোতে
এ দুর্বলতা আর কাটিয়ে উঠতে
পারছে না শিক্ষার্থীরা।
ইংরেজিতে দুর্বলতা নিয়েই শিক্ষাজীবন শেষ
করছে তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমিরেটাস
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বণিক
বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশের
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা ইংরেজিতে পাঠদান
করছেন, তাদের ইংরেজিতে দক্ষতা
কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটি দেখতে
হবে। শিক্ষকরাই
যদি দুর্বল হন, তারা
শিক্ষার্থীদের কী শেখাবেন? একদিকে
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব, অন্যদিকে নিয়োগ
পাওয়ার পরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
না করার ফলে পরিস্থিতির
পরিবর্তন হচ্ছে না।
কমিউনিকেটিভ
পদ্ধতিতে ইংরেজি শিক্ষাদান পদ্ধতিকে
ভুল উল্লেখ করে তিনি
বলেন, আমরা ইংরেজি শিখেছি
গল্প, কবিতা পড়ে।
এখন পাঠ্যবইয়ে গল্প, কবিতা রাখা
হয়েছে খুবই কম।
ফলে ইংরেজি অনেক কঠিন
একটা ভাষা—এ ধরনের মনোভাব
শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে,
যা পরবর্তী সময়ে তাদের এ
বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে প্রতিবন্ধক
হিসেবে কাজ করছে।
সামাজিক
পরিস্থিতির বর্ণনায় সূক্ষ্ম ও যথাযথ ভাষার
প্রয়োগ, উচ্চমার্গীয় ইংরেজি রচনা সহজে
পড়তে পারা এবং ইংরেজি
ভাষা ব্যবহারকারী দেশের স্থানীয় বাসিন্দাদের
সঙ্গে চুক্তিতে দরকষাকষির সক্ষমতা থাকলে তাকে অতি
উচ্চস্তরের দক্ষতা হিসেবে বিবেচনায়
নিয়েছে ইএফ। প্রধান
ভাষা ইংরেজি নয়, এমন
দেশগুলোর মধ্যে এ শ্রেণীতে
প্রথম দিকে আছে নেদারল্যান্ডস,
সিঙ্গাপুর ও সুইডেন।
ইংরেজিতে
কর্মস্থলে প্রেজেন্টেশন দেয়া, টিভি শো
বুঝতে পারা ও পত্রিকা
পড়তে পারাকে উচ্চদক্ষতা হিসেবে
সংজ্ঞায়িত করেছে ইএফ।
দক্ষতার এ শ্রেণীতে থাকা
দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হাঙ্গেরি,
দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইন।
ব্যক্তিগত
দক্ষতার ক্ষেত্রসংশ্লিষ্ট বৈঠকে অংশগ্রহণ, ইংরেজি
গানের কথা বুঝতে পারা
ও পরিচিত বিষয়সংশ্লিষ্ট পেশাদার
ই-মেইল লেখার সক্ষমতাকে
মধ্যম মানের দক্ষতা হিসেবে
চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ শ্রেণীতে যেসব দেশ আছে
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
চীন, কোস্টারিকা, ফ্রান্স ও ভারত।
পর্যটক
হিসেবে ইংরেজি ভাষাভাষী কোনো
দেশে সঠিকভাবে পথ চলাচল, সহকর্মীদের
সঙ্গে ছোট ছোট আলোচনায়
সম্পৃক্ত হওয়া ও ইংরেজিতে
পাঠানো সহকর্মীদের সাধারণ ই-মেইল
বুঝতে পারলে তাকে নিম্ন
দক্ষতা হিসেবে উল্লেখ করা
হয়েছে। এ
শ্রেণীর দেশগুলোর মধ্যে আছে বলিভিয়া,
পাকিস্তান, রাশিয়া, জাপান ও নেপাল।
আর সাধারণভাবে ইংরেজিতে নিজের পরিচিতি (নাম,
বয়স, দেশ ইত্যাদি) তুলে
ধরা, সাধারণ চিহ্নগুলো বুঝতে
পারা ও বিদেশী অতিথিকে
সাধারণ পথনির্দেশনা দেয়ার সক্ষমতাকে অতি
নিম্ন স্তরের দক্ষতা হিসেবে
সংজ্ঞায়িত করেছে ইএফ।
ইংরেজিতে দক্ষতার এ শ্রেণীতে যেসব
দেশ আছে তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ, মালদ্বীপ
ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
ইংরেজি
প্রধান ভাষা নয় এমন
১০০টি দেশের মধ্যে ৪৮
দশমিক ১১ স্কোর পেয়ে
বাংলাদেশের অবস্থান ৭১তম। যেখানে
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশ
থেকে দুই স্তর উপরে
মধ্যম মানে রয়েছে।
তালিকায় ৩৪তম অবস্থানে থাকা
ভারতের স্কোর ৫৫ দশমিক
৪৯। তালিকায়
বাংলাদেশের চেয়ে চার ধাপ
এগিয়ে ৬৬তম অবস্থানে রয়েছে
নেপাল। নিম্ন
স্তরে থাকা দেশটির স্কোর
৪৯। এবারের
সূচকে স্কোরে আগের চেয়ে
পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮
সালের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর
ছিল ৪৮ দশমিক ৭২।
ইংরেজিতে
অদক্ষতা পেশাগত জীবনেও নানা
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে
জানান নিয়োগদাতারা। অ্যাসোসিয়েশন
অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান
আনিস এ খান বলেন,
পেশাগত প্রয়োজনীয়তায় ইংরেজি শেখার বিকল্প
নেই। যদিও
দুঃখজনক হলেও সত্য যে
ব্যাংকে কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে গিয়ে
ইংরেজিতে প্রত্যাশিত দক্ষ জনবল পাওয়া
যাচ্ছে না। বিশেষ
করে আন্তর্জাতিক কোনো গ্রাহক বা
বিনিয়োগকারী কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে
প্রেজেন্টেশন দেয়ার ক্ষেত্রে সাবলীল
ইংরেজি বলতে সক্ষম কর্মকর্তা
খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
শহরভিত্তিক
ইংরেজি দক্ষতার সূচকও প্রকাশ করেছে
ইএফ। সেখানে
দেখা যায়, জাতীয় অবস্থানের
তুলনায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান তুলনামূলক
ভালো। ৪৮
দশমিক ৬৭ স্কোর নিয়ে
রাজধানী ঢাকা রয়েছে নিম্ন
অবস্থানে।
গবেষকরা
বলছেন, দেশের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি
বিষয়ে দুর্বলতার অন্যতম কারণ বিষয়ভিত্তিক
শিক্ষকের অভাব। বেসরকারি
গবেষণা সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান
এডুকেশন ওয়াচ ২০১৮-১৯
প্রতিবেদন বলছে, ইংরেজি বিষয়ে
পাঠদানরত মাধ্যমিকের ৫৬ শতাংশ শিক্ষকেরই
বিষয়ভিত্তিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা
ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক
এসএম হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের
দেশের প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি খুবই জরুরি। মাঠপর্যায়ে
কাজ করতে গিয়ে দেখেছি,
অনেক শিক্ষক ইংরেজি বিষয়ে
স্পষ্ট জ্ঞান না থাকা
সত্ত্বেও এ বিষয়ে পাঠদান
করছেন। শিক্ষার্থীদের
পক্ষ থেকে কোনো জিজ্ঞাসা
এলে নিজের মতো ব্যাখ্যা
দিচ্ছেন। এতে
অনেক সময় দেখা যায়,
শিক্ষার্থীরা ভুল শিখছে।
তাই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টি
আরো গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত।
ইংরেজিতে
দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার ও
শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের জন্য বেশকিছু সুপারিশ
তুলে ধরেছে ইএফ।
সেখানে কারিকুলামে সাবলীলভাবে ইংরেজি বলাকে অনেক
বেশি গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইংরেজিতে
দক্ষতা যাচাইয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়মিত
অ্যাসেস করার কথা বলা
হয়েছে। এছাড়া
ইংরেজি শিক্ষার নতুন পদ্ধতি বিষয়ে
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও ইংরেজিতে নিয়মিত
কথা বলেন এমন শিক্ষক
দিয়ে ইংরেজি শেখানোর ব্যবস্থা
করতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
No comments:
Post a Comment